Loading...
Home / Blog / ট্রেনে ট্রেনে বাংলাদেশে...

ট্রেনে ট্রেনে বাংলাদেশে...

By Tripmate Admin
Travel

আমাদের রেলপথ অত বেশী না, রেলগাড়ির সংখ্যাও কম। তবু দেশের প্রায় ৭ বিভাগে ঢাকা থেকে প্রতিদিন বিভিন্ন গন্তব্যে রেলগাড়ি যায়। তার মধ্যে গুটিকয় নির্দিষ্ট রুটে ছাড়া সারা বাংলাদেশে রেলগাড়িতে ওইভাবে ঘুরি নি। তাই এইবারের প্লান ট্রেন রুট, জংশন, নতুন অঞ্চল ট্রেনে ট্রেনে এক্সপ্লোর করা। যেখানে কোন টুরিস্ট স্পট দেখা মোটেও উদ্দেশ্য না। এক ট্রেন থেকে আরেক ট্রেন, এক জেলা থেকে আরেক জেলা, দিনে বা রাতে চড়ে বেড়াবো এটাই মুখ্য। জানুয়ারি ১৬ তারিখ সকালে তাই যাত্রা শুরু করলাম ঢাকা থেকে চিলাহাটির উদ্দেশ্যে৷ বললাম আর চলে গেলাম ট্রেন জার্নি এখন আর মোটেও এমন না! ৫ দিন আগে ট্রেনের টিকেট অফলাইন আর অনলাইন ছাড়ে। বেশীরভাগ ট্রেনের ই টিকেট প্রথম দিন ই ঘন্টাতিনেকের মধ্যে বিক্রি হয়ে যায়। এটা খুব আজিব ব্যাপার৷ স্বাধীনতার পর থেকে রেল লোকসানে চলে, কিন্ত টিকেট কখনোই পাওয়া যায় না। স্টেশনে গেলাম আর টিকেট কেটে চড়ে বসলাম এমনটা হয় না আর। একটু ভাল সিট বা পছন্দসই বগির জন্য আপনাকে ৫ দিন আগেই প্রথম ঘন্টায় টিকেট কেটে ফেলতে হবে৷ না পারলে রেলে চড়ার আশা বাদ ঠিক না, তবে আমার প্লান যেহেতু একটার পর একটা ট্রেন ধরা। তাই খুব প্রিসাইসলি ট্রেনের সময়, টিকেট, গন্তব্য পড়াশোনা করে নিতে হয়েছে আগে থেকেই। আমাদের প্রথম দিনের গন্তব্য নীলসাগর এক্সপ্রেসে ঢাকা থেকে চিলাহাটি। দ্বিতীয় দিনের সকালে গন্তব্য চিলাহাটি থেকে খুলনা, রুপসা এক্সপ্রেসে। তৃতীয় দিনের গন্তব্য খুলনা থেকে ঢাকা। পর পর দুইদিন সকাল ৮ টার আগে উঠে বসে থাকতে হয়েছে টিকেটের আশায়। আমি অনলাইনে পেলাম না, আরেকটা কারন দু দিন আগে ট্রেনের সিট অমিক্রন সংক্রমনে অর্ধেক করে দেয়ায়। এটা খুব মজার সিদ্ধান্ত নীতি নির্ধারকদের৷ লঞ্চ আর বাস চলছে ফুল ক্যাপাসিটিতে৷ ট্রেনে যাত্রী অর্ধেক যাচ্ছে! অবশ্যই কাগজে কলমে! সে ব্যাপারে জার্নির মাঝে কখনো লিখব৷ উপকার করলেন আমার সহযাত্রী বন্ধু সাদাত ভাই। সকাল ৭.৩০ এ কমলাপুরে লাইন ধরে টিকেট কেটে আনলেন ঢাকা থেকে চিলাহাটির। পরের দিন সকালে আবার উঠে বসে রইলাম চিলাহাটি থেকে খুলনার টিকেটের জন্য৷ এবার দুজনেই আমরা ব্যর্থ৷ অন অফ কোথাও পেলাম না টিকিট৷ এবার সাহায্য করলো আমাদের খুলনার এক বন্ধু। তিনি গিয়ে কেটে নিলেন চিলাহাটি থেকে খুলনার টিকেট দু জনের জন্য৷ সকাল ৭ টায় ট্রেন৷ ধানমন্ডি থেকে ৩০ মিনিট বেশী সময় পাবো এই আশায় চলে এসেছি এয়ারপোর্ট স্টেশনে। এসে দারুন লাল চা খেয়ে নীলসাগরে উঠে পরলাম। সাদাত ভাই কমলাপুর থেকেই উঠেছেন। আড্ডা দিতে দিতে জয়দেবপুর। দিনের ট্রেন যেহেতু প্লান হচ্ছে সব স্টেশনে থামলেই আমি নামবো হাটবো, মানুষ দেখব, স্টেশন দেখবো। এটাই ট্রিপ। এটাই প্লান। যমুনা নদীতে দেখলাম নতুন রেল সেতুর কাজ চলছে৷ রানীনগর স্টেশনে অনেকক্ষন দাড়ালো। সব স্টেশনেই এখন প্লাটফর্ম উচু করার কাজ চলছে। জয়পুরহাট আসতেই খুদায় ঝাপিয়ে পরে ড্যানিশ বিস্কুট কিনলাম।

উত্তরের এই ছোট ছোট বেকারি আইটেম গুলো যে কি মজার। পার্বতীপুর রেলের ইঞ্জিন বগি বদলায় তাই ১৫/২০ মিনিট সময় পাওয়া যায়৷ স্টেশনের পাশের বাজার থেকে দৌড়ে পরোটা সবজি আর রসমালাই কিনে এনে ট্রেনে আরাম করে খেলাম। ২ জনের নাস্তার বিল মাত্র ৯০ টাকা। এত দারুন খাবার এত সস্তায় বাংলাদেশের উত্তরেই এখনো সম্ভব। সৈয়দপুর নীলফামারি ডোমার হয়ে ১১ ঘন্টা পর ট্রেন চিলাহাটি ঢুকলো। প্রাচীন এক স্টেশন। কদিন পর এই দিক দিয়ে হলদিবাড়ি ( জলপাইগুড়ি) ট্রেন চলবে এই পথেই৷ অল্প দূরেই সীমান্ত এখান থেকে। নেমে স্টেশনে চা খেয়ে হেটে হেটে ডাকবাংলো খুজে বের করলাম। কেয়ারটেকার এর বৌ থেকে নাম্বার নিয়ে কল করে বললাম আমরা দুইজন অতিথি আছি রাতের জন্য৷ আমাদের ন্যাশনাল আইডি জেরক্স করে আনতে বললো৷ সন্ধ্যা হয় হয় এমন সময় পুরো বাজার চক্কর দিয়ে কপি করে আনলাম৷ ছোট্ট বাজার। কেয়ারটেকার ফিরতেই সুন্দর রুম খুলে দিলো। ২ টা বেড, বিশাল রুম। পুরনো বাংলো তবে নতুন রেনোভেট করা। জামা কাপড় বদলে রাতের খাবার খুজতে বের হলাম। বড় বড় রেস্তোরা এড়িয়ে স্থানীয় লোকজন থেকে জানলাম ভেতরে তবারক বা মোবারক নামের একজনের ভাতের হোটেলে খাবার ভাল হয়। সেখানে পৌছে গরম সবজি খিচুরি আর গরুর গোস্ত। আচ্ছা রান্না হয়েছে৷ রুমে ফেরার পথে একটু ভাপা পিঠাও চেখে দেখলাম। রেল লাইনের উপরে বসেই বানাচ্ছে। শীত পরে গেছে ভালো ই। ঘন্টাখানেক পর আবার বাইরে বের হয়ে চা এর দোকান খুজে চা পান করে সোজা বিছানায়৷ সকালে ৮.৩০ এ আবার রুপসা এক্সপ্রেস ধরতে হবে। চিলাহাটি থেকে খুলনার জন্য।

চিলাহাটির চিলড ডাকবাংলোয় ঘুমটা হলো খাসা। সকাল ৮.৩০ এ আজকের ট্রেন। ৬.৩০ এ একবার ঘুম ভেংগে মাঠে হেটে এলাম, ২ হাত দূরে কিছু দেখা যায় না এত কুয়াশা। আবার এসে কম্বলের তলে। পরের ঘুম ভাংগলো এক বিশাল ছাগলের ডাকে! রুমে চনমনে রোদ ঢুকেছে, সংগের সাদাত ভাই ফোনে কথা বলতে বাইরে গেছে, এই সুযোগে ছাগল ঘরে ঢুকে পরেছে। ঘড়ি বলছে ট্রেন ছাড়ার আর ২৫ মিনিট বাকি, যদিও বাংলোর থেকে ট্রেন এর শেষ বগির দূরত্ব ৫০০ মিটার ও না, তবুও পরিমরি করে রেডি হয়ে বের হলাম। কেয়ারটেকার কে ডেকে ভাড়া পরিশোধ করে যখন হাটা ধরেছি রেল লাইন ধরে তখন আর ৫ মিনিট বাকি ট্রেন ছাড়ার। আমাদের বার্থের কামরা একদম শেষের আগেরটা, উঠে পরা মাত্র হুইসেল দিলো ট্রেন দুবার। ছেড়ে দিলো একদম ঘড়ির কাটায় ৮.৩০ এ৷ আমাদের রেল পরিক্রমায় আজকের গন্তব্য চিলাহাটি থেকে খুলনা৷ ট্রেনের নাম " রুপসা এক্সপ্রেস"। বাংলাদেশের যাত্রীবাহী ট্রেনের মাঝে সবচেয়ে বড় দূরত্বের মাঝে এটা একটা। বেশ সুন্দর একটা সিংগেল ক্যুপ বার্থ পেয়েছি কপাল গুনে৷ যেহেতু ট্রেনে তখন অর্ধেক আসনে যাত্রী পরিবহন চলছে তাই এই কুপে ৪ জন চড়ার কথা থাকলেও আমরা শুধু দুইজন যাচ্ছি। শেষ বগির এক অংশ খাবার গাড়ি, খালিপেটে চিলাহাটি থেকে উঠেছি, কি আছে খাবার খুজতে ঢু মারলাম খাবার গাড়িতে। দেখলাম কাটলেট ভাজছে। গরম ভাজছে যখন আশা করা যায় খাবার টা মজাই হবে। ২ জনের জন্য গরম গরম কাটলেট,ব্রেড,চিকেন ফ্রাই এর যে প্যাকেজ তা অর্ডার করে বার্থ নাম্বার দিয়ে এলাম। ডোমার স্টেশনে দাড়িয়েছে ট্রেন৷ আমরা এখন একদম পেছনের বগি হওয়ায় প্লাটফর্মের শেষে দাড়াচ্ছে ট্রেন৷ অন্য কিছু খাবার নেমে কেনার সুযোগ ও কম। সৈয়দপুর আসার কিছু আগে ব্রেকফাস্ট দিয়ে গেলো। এত তেলে ভাজা সব খাবার খেয়ে নাস্তা করার অভ্যাস আমাদের নেই, তবুও দেখা যাক একদিনের ই ব্যাপার। আর প্যাকেট একদম গরম। পাউরুটিকে আবার তেলে ভাজার বুদ্ধি রেলের ক্যাটারারদের কে দিয়েছে জানি না, কিন্ত অত্যন্ত তেল জবজবে পাউরুটি কামড় দিয়েই মন এবং পেট দুটোই আতকে উঠেছে। কাটলেট টা তাও মন্দের ভালো। সকালেই ভেজেছে নতুন। আমাদের রেলের শত বছরের ঐতিহ্যবাহী কাটলেট! সাথে চিকেন ফ্রাই বলে যেটা দিয়েছে সেটা আসলে নেয়ার মত উপায় নাই, একটা খুবই শীর্ন মুরগীর রান হলুদ মেখে ভেজে ফেলেছে, এর কোন টেস্ট ও নাই, আর টেনেও ছেড়া যায় না এত শক্ত। হয়ত প্রথম যেদিন ভেজেছিল সেদিন ভালো ই ছিল! আজ সকালে আবার ভাজাতে মাংস হয়ে গেছে হাড়ের মত শক্ত! কোনমতে দু কামড়ের বেশী চিকেন ফ্রাই এ দেয়ার উপায় রইলো না৷ ফেলে দিতে হলো, মাংস থেকে বেশী তেল খেয়ে ফেলেছি। কাটলেট দিয়ে তেলে ভাজা পাউরুটি ও পুরোটা কেউ খেতে পারলাম না। পাউরুটি হয়তবা মেয়াদ উর্ত্তীন্ন তাই তার দোষ ঢাকতে তেলে ভেজে ফেলা। এত তেল খেয়ে সাত সকালে গা গুলাচ্ছে, যাক অভিজ্ঞতা ত হলো! রেলের খাবার মজা না জেনেই অনেক বছর খাই না এই ১৬০/১৮০ টাকা দামের এই চিকেন - কাটলেট - ব্রেড প্যাকেজ। আজকে গরম ভাজতে দেখে লোভে পরে খেলাম। একটা দেশের রেলে আসলে এমন নাস্তা থাকাই উচিত না, যেটা আমরা অন্য সময় নিয়মিত নাস্তায় খাই না। কেনো এখনো ব্রিটিশ আমলের মত এই খাবার ই চলছে তা এক রহস্য। দেশের অনেক প্লাটফর্মে এরচেয়ে মজার পরোটা ডিম ডাল ভাজি বিক্রি করে। সস্তা এবং মজার৷ কেনো এখনো কেউ এই মেন্যু বদলানোর চেস্টা করলো না? একদিকে এত দামি আরেকদিকে অস্বাস্থ্যকর তেলে চুবানো এই নাস্তা অবশ্যই বদলানো দরকার। পার্বতীপুর আসতে ২০ মিনিটের ব্রেকে নেমে লোকাল বেকারির কেক বিস্কিট দারুন দুধ চা খেলাম। দুপুরের আগে আবার বেয়ারা এসে গেটে নক করে জিজ্ঞেস করলো ভাত খাবো কিনা, রেলে ভাতের ব্যাপার হলো অর্ডার যত জনের হয় তত গুলো মিল রান্না হয়। একটু আলাপ করলাম সকালের নাস্তার ব্যাপারে! এমনই হলে বাপু দরকার নাই ভাত খাওয়ানোর। বললো, " না স্যার, ভাত মুরগী তরকারি আর সবজি থাকবে, এটা অনেক ভালো হবে " ১৫০ টাকা প্যাকেজ৷ পোলাও খাওয়ানোর ব্যাপারে একটু বলা শুরু করেছিল৷ থামিয়ে দিয়েছি সাথে সাথেই, থাক বাপ! চাল কে আবার তেলে চুবিয়ে পোলাও খাওয়ার কোন শখ নেই আমাদের। সাদা ভাত ই সই। বীরগঞ্জ, সেতাবগঞ্জ একে একে পাড় হলো ট্রেন। জয়পুরহাট ঢুকতেই দৌড়ে প্লাটফর্ম থেকে লোকাল বেকারীর বিস্কিট কিনে আনলাম কিছু, এটা টুম্পার ফরমায়েস। গতদিন ছবি দেয়াতে কয়েকটা ঢাকা নিয়ে যেতে বলেছে। সাথে সাদাত ভাই তখন আপার বার্থে দিব্যি ঘুমাচ্ছে স্লিপিং ব্যাগ মুড়ি দিয়ে। আমি জানালা দিয়ে মাঠ, ঘাট, গাছপালা এসব দেখছি আর বিস্কিট ঢুবিয়ে কফি খাচ্ছি। সান্তাহার আসতে বেয়ারা ভাত দিয়ে গেলো। অনেক ভয়ে ভয়ে খুললাম প্যাকেট। অনেক ভাত, সে তুলনায় এতটুকু সবজি, সাথে মুরগীর ঝোলটা কোনমতে পেটে চালান দেয়া যায়। টেস্ট কিছু না, পেট ভরে এই যা। এবারের মাংস সকাল থেকে ঢের নরম৷ আজকের ই রান্না এটুকু যা স্বস্তি! কিছুক্ষন শুয়ে শুয়ে ঝিমাতে চলে এলো ট্রেন ঈশ্বরদী জংশন। এ এক আজব জায়গা। যেদিকে তাকাও সেদিকেই ট্রেন। মালবাহী, তেল বাহী বগি এদিক ওদিক পরে আছে। শুধু লোকো টিং টিং ঘন্টা বাজিয়ে শেডে যাচ্ছে, আসছে।কোন লোকাল দাঁড়িয়ে আছে তো কোন আন্তঃনগর বেরিয়ে যাচ্ছে আরেক প্লাটফর্ম থেকে। মানে রেলের এক বিশাল যজ্ঞ এখানে চলে সারাদিন সারারাত। রেলগাড়ি আর তার সংলগ্ন জীবন যাপন নিয়ে আগ্রহ থাকলে ঘন্টার পর ঘন্টা কাটিয়ে দেয়া যাবে শুধু ঈশ্বরদী জংশন এ বসেই। আমাদের এক জার্মান বন্ধু টিনা, ওর ফটো স্টোরির জন্য পাঠিয়েছিলাম দু বছর আগে ঈশ্বরদী। এতটাই মজেছিল এই স্টেশনে প্রায় মাস তিনেক থানার দারোগা থেকে প্লাটফর্মের ভিখারি সব্বাই টিনাকে চিনতো তখন। অনেকক্ষন হয়ে গেলো ট্রেন ছাড়ছে না, লেট আছে অলরেডি। এক টিটিই কে সামনে পেতে জিজ্ঞেস করলাম স্যার ঘটনাখানা কি! বল্লো, ওইযে দেখছেন ঢাকা থেকে সুন্দরবন এক্সপ্রেস ঢুকছে, আমরা চাই ও আগে চলে যাক। কেনো কেনো, ও আগে গেলে কি হবে? পরে এসে আগে যাবে এ কেমন বিচার৷ আরে, সরকারি নিয়মে ট্রেনে ধারন ক্ষমতার অর্ধেক আসনে যাত্রী নেয়ার কথা৷ একবার পেছন দিকের বগিগুলো দেখে আসুন, আমার ট্রেনে আর দাড়ানোর ও জায়গা নেই। স্টেশনে টিকেট নাই দেখে সবাই বিনা টিকেটেই রেলে চড়ে বসেছে। সুন্দরবন ফাকা আছে ও আগে গেলে আমাদেরটায় চাপ কমে সামনের স্টপেজগুলোয়৷ উত্তম চিন্তা! প্লাটফর্ম ধরে পেছনে হেটে দেখে এলাম। প্রচুর মানুষ ট্রেনে৷ করোনা আর অমিক্রনকে মধ্য আংগুলি দেখিয়ে সবাই গাদাগাদি করে ট্রেনে চড়েছে। সুন্দরবন চলে গেলো, এর সাথে দূরত্ব বাড়াতে আরো অপেক্ষা করলো আমাদের রুপসা এক্সপ্রেস। মোটামুটি আগের ট্রেন যখন পাকশী স্টেশন ফেলে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ চড়ে ফেলবে তখন আমরা যাত্রা শুরু করবো।

সঠিক সময়ে সকালে ট্রেন ছাড়ার পর ও বিশাল লেটে খুলনা পৌছাবো বুঝতে পারছিলাম। ছাড়লো অবশেষে আমাদের ট্রেন প্রায় পৌনে এক ঘন্টা ঈশ্বরদী জংশনে বিরতি দিয়ে৷ পাকশী স্টেশন টা ছোট্ট কিন্ত খুব সুন্দর ব্রিটিশ আমলের লাল ইট এখনো রয়েছে। এইদিকে বাকি সব স্টেশন ই খুব সুন্দর। অফিশিয়ালি উত্তরবংগ এখানেই শেষ। পদ্মা পাড়ি দিচ্ছি হার্ডিঞ্জ ব্রিজ চড়ে। দক্ষিন বংগে প্রবেশ। খুলনা বিভাগ শুরু। মানুষের কথায় আমূল পরিবর্তন। সকাল থেকে ৪/৫ রকমের উত্তরবংগের আঞ্চলিক ভাষার শেষে এখন কিছু যাত্রী আর প্লাটফর্মে মিস্টি কুস্টিয়া অঞ্চলের ভাষা শোনা যাচ্ছে। লম্বা রেল যাত্রার এটাই সৌন্দর্য, এই পরিবর্তনগুলো ই উপভোগ্য। বাহন রেলগাড়ি হতে পারে, কিন্ত এই ছোট ছোট পরিবর্তন গুলো দেখাটাই এক বিশাল মজার ব্যাপার। পোড়াদহ জংশনে দাড়ালো কিছুক্ষন। যদ্দুর জানি এটা সম্ভবত পূর্ব বংগের প্রথম রেল জংশন। এখানে এখনো উত্তরবংগের মত প্লাটফর্ম উচুর কাজ ধরে নি। তাই প্লাটফর্ম অনেকটাই নীচে। নামতে উঠতে বেশ কসরত করতে হয়। আমার অভ্যাস স্টেশনে থামলেই নেমে একটু হাটাহাটি করা, কোন বেঞ্চি পেলে তাতে বসে আশপাশ পর্যবেক্ষন করা। বাংলার এই অঞ্চলটা এখনো অনেক কৃত্রিমতা বিবর্জিত। হুট করে মনে হয় ৮০ বা ৯০ দশকে ফিরে গেছি। বাড়িঘর,মানুষের পোষাক, আচরন,খাবার সব কিছুই যেনো এখানে খুব স্লথ। কোন তাড়া নেই। সুন্দর। দুবার এসে প্লাটফর্মেই চা দিয়ে গেলো বেয়ারা। সারাদিনের অভিজ্ঞতায় এরা দেখেছে এক পাগল লোক সব স্টেশনে নেমে হাটে! স্টেশনের নামগুলো এখানে আলমডাংগা, চুয়াডাংগা, দর্শনা হল্ট। ও বলতে ভুলে গেছি, যশোরে আমার ই মিতা নিয়াজ ভাই অপেক্ষা করছে, ট্রেন লেট দেখে বারবার খোজ নিচ্ছে। যশোর ঢুকলেই এককাপ চা একত্রে পান করবো এটা প্লান। সন্ধার পর পর যশোর ঢুকলো ট্রেন। বগির সামনের এক টি স্টল এ নেমে পেলাম নিয়াজ ভাই কে। " আপনার খাবারের দুর্গতি দেখে যশোরের বেস্ট কাবাব আর লুচি নিয়ে আসছি! " হাত মেলানোর আগে কাবাবের ঠোংগা ধরিয়ে দিলো। যশোরের সুস্বাদু মালাই চা চুমুক দিয়ে নিয়াজ ভাই কে বিদায় দিলাম। কামরায় ঢুকেই সাদাত ভাই সহ কাবাব খুললাম। উফফ, যে ঘ্রান টা ছড়িয়ে গেলো পুরো কামরায়। এই মাঘের শীতের সন্ধ্যায় এরচেয়ে ভালো নাস্তা হতেই পারে না৷ ব্যগ ব্যাগেজ গুছিয়ে নিলাম। খুলনায় ঢুকলো যখন ট্রেন তখন প্রায় ৭. ৩০ বাজে। গতকালকের মত আজকেও ১১ ঘন্টার ট্রেন জার্নি৷ সুন্দর ঝা চকচকে আলোকিত খুলনা স্টেশন। বাইরে সাদাত ভাই এর এক বন্ধু অপেক্ষায়। তার বাসাতেই আজকে রাতের আশ্রয়। অনলাইন অফলাইন মামালাইন সবদিকেই চেস্টা করলাম পরের দিনের ঢাকা যাওয়ার ট্রেন টিকেট ম্যানেজ করতে৷ পারলাম না। ঢাকা - চিলাহাটি, আর চিলাহাটি - খুলনা। দুটো ট্রেন টিকেট ই ৫ দিন আগে কাটা ছিল। শুধু তখন পাই নি খুলনা ঢাকার টিকেট। এখানে নেমেও নিরাশ হলাম। একে ত যাত্রী অর্ধেক তার উপর আগামীকাল একটা ট্রেনের অফ ডে। আরো চাপ। কি আর করা, বাসেই ফিরতে হবে এ যাত্রা। বাইকে ৩ জন চেপে ভাই এর বাসায়। গোসল দিয়ে গেলাম তাদের ব্যাডমিন্টন কোর্টে৷ দুই বন্ধু কিছুক্ষন শীতের রাতে ব্যাডমিন্টন খেললো। আমি দূরে বসে দেখলাম। এরপর খেতে গেলাম আব্বাস হোটেলের ২য় শাখা সোনাডাংগায়। জম্পেশ ভাত চুইঝাল গোস্ত খেয়ে হা হু করে খেতে নিয়ে গেলো মিস্টি। বাসার জন্য ও মিস্টির পোটলা ধরিয়ে দিলো। ২ দিন পর পর ১১+১১ ঘন্টা ট্রেন জার্নি করে যথেস্ট ক্লান্ত৷ তবুও অনেক রাত অব্দি আড্ডা চললো। অনেক অনুরোধ করলো আমাদের পরদিন থেকে যাওয়ার জন্য। কিন্ত ২ জনের অনেক কাজ ঢাকায় যে করে হোক ঢাকায় যেতেই হবে, ট্রেন পাই নি তাই বাসে হলেও। ৩ দিন সপ্তাহের মাঝে ম্যানেজ করে ট্রিপ করতে এসেছি এই ঢের। পরদিন সকালে নাস্তা করে টুংগিপাড়া এক্সপ্রেসে চড়ে খুলনা থেকে বিদায় নিলাম৷ এরপরের ট্রেন যাত্রার ছক ও কষে ফেলেছি মনে মনে। এবার আর দু দিন না, ৩ দিনে ৩ ট্রেন হতেই হবে।